শুক্রবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২০

IAOP যেভাবে সফল ফ্রিলেন্সিং ক্যারিয়ার গড়বেন

 

ফ্রিলেন্সারদের কাছে জনপ্রিয় একটি মার্কেটপ্লেস হচ্ছে IAOP  বর্তমানে IAOP কে বলা হয় প্রফেশনাল ফ্রিলেন্সারদের জায়গা।তাই আজকাল বাংলাদেশে কেউই নতুন ফ্রিলেন্সারদের পরামর্শ দেয় না IAOP  কে কাজ করে ক্যারিয়ার গড়ার, কারণ আপওয়ার্কের কঠুর নিয়ম-শৃঙ্খলা সম্পর্কে অজ্ঞ এবং সঠিক দক্ষতার অভাবে অনেকেই আপওয়ার্ক থেকে বাংলাদেশের জন্য অনেক দুর্নাম অর্জন করেছেন যার ফল ভুগ করতে হচ্ছে প্রফেশনাল ফ্রিলেন্সারদের।আজ আপওয়ার্ক নিয়ে বিস্তারিত গাইডলাইন দেয়ার চেষ্টা করেছি।যেন আর কাউকে আপওয়ার্ক থেকে খালি হাতে ফিরতে না হয়।

IAOP একবার কাজ পেলে পিছনে ফিরে না তাকালেও চলে। IAOP একজন বায়ারের কাছ থেকে ভালো ফিডব্যাক পেলে অন্য বায়াররা সেলারকে খুব সহজেই বিশ্বাস কাজের যোগ্য মনে করে।
IAOP  যে সমস্ত কাজপাওয়া যায় :

ওয়েব এবং সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট

এসইও, অনলাইন মার্কেটিং

গ্রাফিক্স ডিজাইন মাল্টিমিডিয়া

মোবাইল অ্যাপস

রাইটিং ট্রান্সলেশন

সেলস মার্কেটিং

নেটওয়ার্কিং ইনফরমেশান সিস্টেম

অ্যাডমিনিস্ত্রেটিভ সাপোর্ট।

আরও অনেক ধরনের কাজ পাওয়া যায় নিচের ছবি তে একটি সম্পূর্ণ লিস্ট দেয়া আছে সেখান থেকে আপনার উপযোগ্য কোনটি বেছে নিন।

কাজ করার ধরন

১। ফিক্সড প্রাইস কাজঃ একটা কাজের জন্য নির্দিষ্ট প্রাইস

উদাহরণঃ একটি লোগো দরকার এবং এর জন্য ক্লায়েন্ট আপনাকে $40 দিবে,

 

২। আওয়ারলি কাজঃ একটা কাজের জন্য নির্দিষ্ট টাইম দেয় এবং সেই টাইম এর মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে

 

উদাহরণঃ একটি লোগো দরকার এবং এর জন্য ক্লায়েন্ট ঘণ্টা সময় দিবে এর মধ্যে আপনাকে কাজটি করে দিতে হবে, আপওয়ার্ক একটা বিশেষ সফটওয়্যার দ্বারা আপনার কাজের হিসাব রাখে এবং ক্লায়েন্টকে সময়মত কাজের স্ক্রীনশট দিয়ে কাজটি সম্পর্কে অবহিত করা হয়। আর প্রতি ঘণ্টায় ক্লায়েন্ট আপনাকে আপনার রেট অনুযায়ী ডলার পেমেন্ট করবে।

 

IAOP  অ্যাকাউন্ট শতভাগ প্রোফাইল তৈরি :
আপওয়ার্কে কাজের জন্য আবেদন করতে হলে প্রথমে আপওয়ার্কে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে।  এক্ষেত্রে একটা ইমেইল এড্রেস লাগবে। অ্যাকাউন্ট নিশ্চিত করার জন্য ইমেইল ভেরিফিকেশান করা হয়। অ্যাকাউন্ট করার সময় সাইনআপ ফর্মে সঠিক তথ্য দিয়ে পূরণ করতে হয়। অ্যাকাউন্ট নিশ্চিত হয়ে গেলে  নিজের প্রোফাইলকে প্রফেশনালভাবে সাজাতে হবে।

 

IAOP অ্যাকাউন্ট লগইন থাকা অবস্থায়এডিট প্রোফাইল গিয়ে অ্যাকাউন্ট এডিট করতে হবে। হাসি খুশি স্পষ্ট একাটা প্রোফাইল পিকচার ব্যবহার করা ভাল। প্রোফাইলে আপনার অতীতে করা কাজের উদাহরণযুক্ত করা যায়। এটা বায়ারকে আপনার প্রতি আস্থা তৈরি করে। তাছাড়া যে কাজে আপনি এক্সপার্ট সে কাজের যদি কোন সনদপত্র থাকে তাহলে তা ব্যাবহার করতে পারবেন। টাইটেলে আপনি যে কাজ করতে চান সেগুলোর সুন্দরভাবে উল্লেখ করুন যাতে যে কেউ বুঝতে পারে আপনি সে কাজগুলোতে দক্ষ। এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারন এটাই আপনার নামের সাথে সবার প্রথমে ক্লায়েন্ট দেখতে পারবে। এটা দেখে ক্লায়েন্ট পছন্দ করলে আপনার বাকি প্রোফাইল দেখতে আগ্রহবোধ করবে।

 

 ওভারভিউ সুন্দর করে লিখবেন। কপিপেস্ট করা যাবেনা। নিজে লিখলে সবচেয়ে ভাল হয়। যদি না হয় অন্য কোথাও থেকে আইডিয়া নিতে পারেন। এখানে যে যে বিষয়ে আপনি দক্ষ সে বিষয়গুলো যোগ করতে পারেন। সর্বনিম্ন ৫ডলার করবেন, তাও প্রথম ফিডব্যাক পর্যন্ত। এরপর বাড়াতে থাকবেন। স্কিলটেস্ট ছাড়া ১০০% প্রোফাইল করা যাবেনা। প্রোফাইল শতভাগ করার জন্য স্কিল টেস্ট দিতে হয়। যার যেই বিষয়ের উপর জ্ঞান আছে এবং যে বিষয়ে কাজ করতে আগ্রহী সে সেই বিষয়ের উপর স্কিল টেস্ট দিতে পারেন।  স্কীল টেস্টে ভাল ফলাফল করলে সেটিকে প্রোফাইলে প্রদর্শণ করাবেন।  তাতে প্রোফাইল শক্তিশালী এবং প্রফেশনাল হবে।


IAOP  কাজের জন্য কিভাবে আবেদন করতে হয় :
জবে ক্লিক করলে যে কাজটি ক্লায়েন্ট আপনাকে দিয়ে করাবে সেটির বর্ণনা আসবে। সেটি ভালভাবে পড়ে দেখুন, আপনার পক্ষে করা সম্ভব কিনা। কাজটির ধরন কি? ঘন্টাভিত্তিক হলে লিখা থাকবে আওয়ারলি, ফিক্সড হলে লেখা থাকবে ফিক্সড। তারপর থাকে কতদিনের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে, কাজটি কবে পোস্ট হয়েছে আরও অনেক কিছু আছে। পড়ে বুঝে নিতে হবে।কোন জব পোস্টের ১০ মিনিটের মধ্যে বিড করলে কাজ পাওয়ার সুযোগ বেশি।

 

) IAOP  কাজের জন্য আবেদন করাটাকে বিড বলা হয়। আপনার একাউন্টের জন্য নির্দিষ্ট ৩০টি বিড করার কোটা আছে। অর্থাৎ এক মাসে ৩০টা কাজের জন্য আবেদন করা যায়। সুতরাং আপনার কোটা ভালভাবে বুঝে ব্যবহার করবেন। শুধু শুধু বিড করে  আপনার কোটা নস্ট করে কোন লাভ নেই। তাছাড়া অতিরিক্ত বিড কিনাও যায়।

 

)  যে কাজটির জন্য বিড করবেন, সেটার বর্ণনা ভালভাবে পড়ে বুঝেনিন। যে কাজে বেশি বিড হয়নি, সেগুলোতে বিড করবেন, কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর বেড়ে যাবে। যদি আপনার প্রোফাইল নতুন হয়, তাহলে আপনার নিয়ম ভালভাবে পালন করতে হবে।৩) খুব বেশি অনলাইনে থাকার চেষ্টা করুন, যাতে ক্লায়েন্ট আপনাকে কোন কারনে মেসেজ দিলে সেটার উত্তর দিতে দেরি না হয়।

) বিড করার আগে অবশ্যই ক্লায়েন্টের প্রোফাইল চেক করে নিবেন। ক্লায়েন্টের প্রোফাইল চেক করার সময় যে যে বিষয় গুলো লক্ষ্য করবেন:

–   ক্লায়েন্ট এখন পর্যন্ত কত ঘন্টা কাজ করিয়েছে।

–   ক্লায়েন্টের পেমেন্ট মেথড ভেরিফাইড কিনা।

যে ধরনের কাজে বিড করছেন,  সে ধরনের কাজ ক্লায়েন্ট আগে করিয়ে থাকলে সেটা কত রেটে করা হয়েছে, সেটা খেয়াল করবেন।  সে অনুযায়ী বিড করবেন। বিড করার জন্য কভার লেটার লাগবে।


কভার লেটার লিখার নিয়ম:
কভার লেটার ইংরেজিতে লিখতে হয়। এজন্য ইংরেজিতে মোটামুটি জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। খুব লম্বা করে কভার লেটার লিখবেন না।

পারলে এক-দুই লাইনে লিখে ক্লায়েন্টকে  বুঝানোর চেষ্টা করোন কাজটি পারবেন, তাহলে ক্লায়েন্ট খুশি হবে সবচাইতে বেশি। ক্লায়েন্টের সময়ের মূল্য আছে। বড় কভার লেটার দেখলে ভয়ে আর সেটা পড়বেনা ক্লায়েন্ট।

মনে মনে নিজেকে ক্লায়েন্ট ভাবুন। এবার ভাবুন, আপনাকে কেউ কিভাবে বললে আপনি কাজটি টাকা খরচ করে করাবেন।  অন্যের কভার লেটার নিজে ব্যবহার করবেননা। আপনি ইংরেজী কম জানলেও না। কারন আপনি খুব ভাল কেউ ইংরেজী পারে এমন কাউকে দিয়ে হয়ত কভার লেটারটি লেখালেন্। ক্লায়েন্ট কাজ দেয়ার আগে আপনাকে ইন্টারভিউতে ডাকবে। তখন দেখল আপনার ইংরেজী লেখার ধরন অন্যরকম, তখন শুরুতেই আপনার ব্যাপারে বিশ্বাসটি উঠে যাবে। সেজন্য কাজটি আর আপনি পাবেননা। নিজের একই কভার লেটারও বারবার ব্যবহার করবেন না। অর্থাৎ যা লিখবেন, প্রত্যেকে বিড করার সময় কাজের বর্ণনা বুঝে লিখবেন। বেশি কথা না বলে আপনার কাজের স্যাম্পল দিন। এটি আপনার ৫০০০ লাইনের কথা বলার সমান কাজ করে দিবে। কভার লেটারে নিজের গুনগান গেয়ে কিংবা করুণা ভিক্ষা চেয়ে ক্লায়েন্টকে আকর্ষণ করার চেষ্টা করবেন না। প্রজেক্টটি ভালভাবে বুঝে সে অনুযায়ি কভার লেটার তৈরি করুন। কখনো ভুলেও আপনার ইমেইল, স্কাইপ আইডি, ইয়াহু, এগুলো কভার লেটারে দেওয়া যাবেনা। ক্লায়েন্ট আপনাকে নক করলে শুধুমাত্র তখনি আপনার কন্টাক্ট ডিটেইলস তাকে দিবেন।
কভার লেটারের গঠন :
কভার লেটারের প্রথমে স্যার বলে সম্বোধন করলে বাংলাদেশিরা পছন্দ করে। কিন্তু হাই , হ্যালো দিয়ে সম্বোধন করলে বিদেশীরা পছন্দ করে। কভার লেটার লিখার সময় নিজেকে এক্সপার্ট পরিচয় দিলে বায়ার আপনার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে। প্রজেক্টটি পড়ে আপনি যে ক্লায়েন্টের চাহিদা ভালভাবে বুঝেছেন, সেটি লেটারের প্রথমেই বোঝানোর জন্য কোন লাইন লিখতে পারেন। এবার বোঝানোর চেষ্টা করুন, আপনারে পক্ষে যে কাজটি করা সম্ভব। ধরনের কাজের ব্যপারে আপনার পূর্ব অভিজ্ঞতা উল্লেখ করুন। ক্লায়েন্টের রিপ্লাইয়ের জন্য আপনি অপেক্ষা করছেন, ধরনের কোন লাইন লিখুন। ধন্যবাদ সহকারে নিজের নাম উল্লেখ করে শেষ করেন লেটারটি।

                                                      কভার লেটারে বায়ারকে বুঝাতে হবে তিনটি বিষয়।

                                                     )  আপনি কাজের বর্ণনা ভালভাবে বুঝেছেন।

                                                     ) কাজটি কিভাবে করতে চাচ্ছেন।

                                                     )   কাজটি আপনার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা না।

শেষকথাঃ আপনার যদি কাজের দক্ষতা থাকে শুধু IAOP  কেন যে কোন যায়গায় আপনি ভাল কাজ করতে পারবেন, আপনার কাজের দক্ষতা IAOP  এর জন্য নির্দিষ্ট নয়। IAOP  নিয়ে আরো লেখা আসছে সঙ্গেই থাকুন।

 

 


আমাদের পোস্টটি যদি আপনাদের ভালো লাগে তবে অবশ্যই শেয়ার করবেন। পেইজটিকে Like দিবেন; যাতে আমরা উৎসাহ পাই এবং আপনাদেরকে আরও ভালো ভালো এবং গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট দিতে পারি। সকল ধন্যবাদ শুভকামনা রইল।